খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ড. ইউনূস ১৮ কোটি জনগণের, পদত্যাগ চাই না : ফারুক
  ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

চিতলমারী নিয়ম বহির্ভূতভাবে দরপত্র ও কার্যাদেশ, অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস পালের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দরপত্র আহবান ও পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা পরিষদের নীতিমালা উপেক্ষা করে তিনি নিজেই দরপত্র আহবান করে ৪ জন ঠিকাদারের অনুকূলে ৩০ লাখ টাকার কার্যাদেশ দিয়েছেন। এমনকি উপজেলা প্রশাসনের নোটিশ বোর্ডে ওই কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে, দরপত্র দাখিলের শেষ সময়ের কয়েক ঘন্টা আগে। এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল ও উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। ইতোমধ্যে অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে লিখিত অভিযোগ ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ায় কার্যাদেশ চারটি বাতিল করেছেন উপজেলা প্রশাসন।

লিখিত অভিযোগ ও অনুসন্ধ্যানে জানাযায়, চলতি বছরের ৯ মার্চ চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন মেরামত ও সংস্কারসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর প্রায় দুই মাস পরে ৪টি দরপত্র আহবান করা হয়। প্রথম দরপত্রে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নক কর্মকর্তার অফিসকক্ষ এবং উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিসকক্ষ সংস্কার ও মেরামত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন (২য়তলা) সংস্কার ও মেরামত, ২ নম্বর দরপত্রে উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস কক্ষ সংস্কার ও মেরামত, উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের বাউন্ডারিওয়াল (সীমানা প্রাচীর) উচুকরণ, ফটকগেট সংস্কার ও মেরামত, ৩ নম্বর দরপত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সংস্কার ও মেরামত এবং ৪র্থ নম্বর দরপত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস বাংলো সংস্কার ও মেরামতের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। ওই দরপত্রে কাজের বিবরণ এবং মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ১৪ মে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে দাখিল করতে হবে। ৩টার দরপত্র খোলার কথা ছিল।

কিন্তু লিখিত অভিযোগ প্রদানকারী মো. রফিকুল ইসলাম মোল্লার অভিযোগ কাগজপত্রে উল্লেখ করেছেন, ৮ মে দরপত্র আহবানের তারিখ দেখানো হলেও কোন পত্রিকায় এই দরপত্র প্রকাশ করা হয়নি। ১৪ মে বেলা ১১টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের নোটিশ বোর্ডে ওই দরপত্র আহবানের নোটিশ টানানো হয়নি।

মো. রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আমি নিয়মিত উপজেলা প্রশাসনের নোটিশ বোর্ড দেখি। ১৪ মে ১১টার সময়ও আমি নোটিশ বোর্ডে কোন নোটিশ পাইনি। পরে এ দিন দুপুর ১টার সময় নোটিশ বোর্ডে ওই চারটি নোটিশ প্রদর্শন করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে যাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিএ‘র কাছে দরপত্র ক্রয় করতে গেলে, তিনি বলেন ওই কাজের কোন দরপত্র নেই। কি কাজ, কত টাকায় করতে হবে, তা উল্লেখ না থাকলে কিভাবে দরপত্রে অংশগ্রহন করব এমন প্রশ্ন করলে, সিএ আমাকে বলেন, এটা স্যার (ইউএনও) জানেন।

এদিকে ১৫ মে ৪টি দরপত্রের বিপরীতে ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করেছেন ইউএনও তাপস পাল। ওই কার্যাদেশে দেখা যায়, প্রথমদরপত্রের অনুকূলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নক কর্মকর্তা অফিসকক্ষ এবং উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিসকক্ষ সংস্কার ও মেরামত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন (২য়তলা) সংস্কার ও মেরামতের জন্য শেখ জাহিদুজ্জামানের মালিকানাধীন মেসার্স জ্যোতি এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দিয়েছে। সেখানে প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৬ টাকা, কার্যাদেশ দিয়েছেন ৭ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৫ টাকায়।

২ নম্বর দরপত্রে উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস কক্ষ সংস্কার ও মেরামত, উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের বাউন্ডারিওয়াল (সীমানা প্রাচীর) উচুকরণ, ফটকগেট সংস্কার ও মেরামতের কার্যাদেশ দিয়েছেন চিরঞ্জিব বিশ্বাসের মালিকানাধীন মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজকে। এই কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৮ লাখ ৫১ হাজার ৬৮০ টাকা, কার্যাদেশ দিয়েছেন ৮ লাখ ৫০ হাজার ৬৮০ টাকায়।

৩ নম্বর দরপত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সংস্কার ও মেরামতের কার্যাদেশ দিয়েছেন তাহজ্জত খানের মালিকানাধীন মেসার্স ইউসুফ খান এন্টারপ্রাইজকে। এই কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৭ লাখ ২ হাজার ২৭১ টাকা, কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার ২৭০ টাকায়।

৪র্থ নম্বর দরপত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস বাংলো সংস্কার ও মেরামতের কার্যাদেশ দিয়েছেন মো. ফারুক মল্লিকের মল্লিক ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজকে। এই কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৬ টাকা, কার্যাদেশ দিয়েছেন ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ টাকা।

প্রাক্কলিত মূল্য ও চুক্তি মূল্য পর্যালোচনা করলে দেখাযায় মাত্র ১ হাজার ২ হাজার টাকার ব্যবধান। এ থেকেই বোঝাযায় এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে দরপত্র আহবানকারীদের আগে থেকেই বোঝাপড়া হয়েছে।

অন্যদিকে এসব বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মো. জাহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের কাজের কার্যাদেশ বিষয়ে আমি অবগত না।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন সরকারি প্রকৌশলী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এই কাজের দরপত্র আহবান করবেন উপজেলা প্রকৌশলী। কিন্তু অজানা কারণে এই দরপত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহবান করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল বলেন, উপজেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই চারটি কাজের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবারও দরপত্র আহবান করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সামনে জুন মাস হওয়ায় উপজেলা পরিষদের আরও কিছু কাজ করানো হবে, এজন্য এক সাথে দরপত্র আহবান করা হবে।

তবে নীতিমালা অনুযায়ী দরপত্র আহবান না করা ও পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান বলেন, দরপত্র আহবান সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!